শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

কলকাতা কলকাতা তেই?

সব কিছু  বদলে  যাচ্ছে...
এমন নয় যে আমায় অকাল-বার্ধক্য গ্রাস করেছে (সে আমি একটু ঠাকুমা-type চিরকাল ই আছি--নিন্দুকে বলে বটে )--কিন্তু  কি জানো , যখন আমাদের চারপাশের জগত তা মতে ভালো লাগে না, যখন ক্লান্তি ঘিরে  ধরে মন, তখন স্বপ্নের মত মনে করতে ভালো লাগে ফেলে  আসা দিন গুলো--আমার শহর, আমার বাড়ি, আমার বন্ধু রা..যেন এক অলীক স্বপ্নের নীড় এর মত সেই দিন গুলো--অথচ তারা আজ ও কোথাও না কোথাও বেচে আছে সেই অনুভূতি তেই নিমপাতা গেলার মতন করে সয়ে নেওয়া যায় বর্তমানের অত্যাচার--আর তাই যখন হঠাত মনে হয় বুঝি সে জগত টা বাস্তবের দুনিয়া থেকে উদাহ হয়ে গাছে; টান  পরে শিকড়ে..ওলট পালট হয়ে যায় অস্তিত্বের ভূমি..হারিয়ে যাওয়ার  ভয় চেপে ধরে...
এমন নয় যে আমি স্থবির, পৃথিবীর স্বাভাবিক নিয়ম ই যে পরিবর্তন এ কথাটাও আমার জানা নেই এমন নয়. আর সেই পুরনো কালের লোকের মত "সে ছিল আমাদের হেমন্ত এখন কি তোমরা সুমন নিয়ে মাতামাতি কর" জাতীয় বক্তব্যেও আমি একমত নই পুরোপুরি..তবু ...আসলে পরিবর্তন টা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুত লয়ে ঘটে যায়--যদি পলক ফেলার মধ্যেই ছিল রুমাল হয়ে যায় বেড়াল তাহলে কি অবাক লাগা বা এমন কি ভয় পাওয়া তাও খুব নিন্দের? 
অবাক লাগে যখন চেনা মিষ্টির দোকান এর জায়গায় ওঠে food -chain  এর ডিলার...যখন চেনা বন্ধু রা ,যাদের সঙ্গে খুচরো গুনতি করে পুটিরাম এ দশ টাকায় কচুরি খেয়েছি কোনমতে, তারা সহজ সুরে অগ্নিমূল্য দোকানে দেখা করার কথা বলে...যখন পাশের বাড়ির কাকিমা facebook এ বন্ধুত্ব পাতাতে চান...যখন আনন্দবাজারের পাতায় পড়ি কলকাতা আজ শীত পোহায় পাকা বিলিতি কায়দায়;পাটিসাপটা-নতুন গুড়-জয়্নগরের মওয়া এ নয়... হঠাত মনে হয় চেনা দুনিয়া টা পাল্টে গেছে, একা আমি ই আমার থেমে যাওয়া সময় কে একরে ধরে বসে আছি বৃথা nostalgia কে সঙ্গী করে..আজকের কলকাতা victoria 's secret এ sale  এর খবর রাখে, ধান্তেরাস আর লোরি উদযাপন করে, আড্ডা মারে নিত্য নতুন shopping  mall এ..অবাক হয়ে খুজতে চেষ্টা করি আমার চেনা শহর টাকে--নিত্য নতুন শিরোনাম এ এই তীব্র গতির, অসাধারণ জেল্লার পরিবর্তন তার আলো  আধার দুই ই নিয়ে আমার চোখে ধাক্কা মারে...


শতাব্দী কাল থেমে থাকার পর হঠাত দৌড়তে শুরু করেছে কলকাতা--তার মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা ছেড়ে, উত্তর কলকাতার অন্ধকার গলি ছেড়ে, তার নন্দন-কফি house  সংস্কৃতি ছেড়ে কলকাতা এগিয়ে গেছে অনেক...আমাদের মত যারা তেমন ভালো দৌড়-বীর নয়; যাদের এখনো বারিস্তা র চেয়ে কফি house এ চায়ের কাপে তুফান তলা আড্ডা ই বেশি প্রিয়, যাদের এখনো স্বাস্থ্য-সচেতন মিলনমেলা র চেয়ে ময়দান এর ধুলিধুসর বইমেলা ই ভালো লাগে, যারা এখনো midnight পার্টি র dress নয়, সরস্বতী পুজোর সারী তেই বেশি স্বচ্ছন্দ তারা থাকুক পিছনে পরে...যতবার ফিরে যাব অপেক্ষায় থাকবে আরো আরো বদলে যাওয়া একটা  কলকাতা...     

২টি মন্তব্য:

  1. এইখানে একটু ভিন্নমত হব স্বাগতা। আমার মনে হয়, আমরা যারা এগিয়েছি (পণ্যতান্ত্রিক মাপকাঠিতে), আমরা যারা এখন আর খুচরো গুনে প্লেট শেয়ার করি না, আমরা যারা চাইলেই গলাকাটা রেস্তরাঁয় ডিনারে যেতে পারি, তাদের মাথার ভেতরেই ওই পুরনো, সস্তা, ব্যাকডেটেড কলকাতাটা (বা রিষড়া) বাসা বেঁধে বসে থাকে। যদি আমরা এখনও ওই জীবনটা যাপন করতাম, তাহলে কি কলকাতার খোলা নর্দমা আর জ্যাম আর ঘাম আর বাসের জানালা দিয়ে উড়ে আসা থুতুকে মায়াবী মনে হত? আমি সিওর নই।

    এটা এক্কেবারে আমার ব্যক্তিগত মতামত, তাই বুঝতেই পারছ, ভুল হতেই পারে।

    উত্তরমুছুন
  2. je dhoroner kolkatabasi ke dekhe amar bismoy tumi tader dole poro na kuntala di, ajker gorporta kolkatar teenager goshthi sotyi anek ta onyorokom...ar oboshyoi kolkata ato druto bodle na gelei tar gham-thutu-jonjale makha chehara ta mayabi lagto na, ami shudhui ei druto bodole amar chomok lagar kothatai bolte cheyechhi..amar nijoswo modhyobittota bolte paro, ebong ami chesta korechi judgemental na hote..

    উত্তরমুছুন

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...