বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

রাত এবং..

এখন আরো একটা রাত নেমেছে অস্টিন শহরের বুকে..আরো একটা রাত, যার স্পর্শ এসে পৌছয় না আমার কাছে এই কাঁচের জানলা পেরিয়েআরাতানুকুল ঘরের মধ্যে..শুধু জানলা দিয়ে দেখি আলোকিত রাস্তার বুকে বিনিদ্র truck  এর গতি..শুনতে  পাই পাশের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলে যাবার  শব্দ; যেন একখন্ড গতি হয়েই  আমার কানে  এসে আঘাত করে..বাইরে বসন্তের  মৃদু হাওয়া, পাশের বাড়ির বাগানের গাছ গুলোর  ফাকে  বাতাস  খেলা  করার  মর্মর--ভিতরে  সুধু একটা কৃত্রিম তাপমাত্রায় বসে আছি আমি..মন কেমন করে কলকাতায়  ফেলে আসা আমার সেই  রাত গুলোর জন্যে...


এই রকম সময়ে , যখন শীত চলে গাছে গরমের আসতে  দেরী  আছে , তখন  ই  কলকাতার রাত গুলো সবচেয়ে  সুন্দরী  হয়ে  ওঠে ..আমার বাড়ির পাশের দোতলা পুরনো  বাড়িটার  ছাদ  ভেসে  যায়  জ্যোত্স্না  আর মিঠে হাওয়ার  সরতে, আমার চেনা দুধ-সাদা বেড়াল টা আরামে গা এলিয়ে শুয়ে  থাকে --ছাদে গজিয়ে ওঠা মস্ত  বড়  বট গাছ টায় ঘুমন্ত পাখির  ছানা  বুঝি  বা  ভয়ের  স্বপ্ন  দেখে  জেগে  উঠে বার দুই ডাক  দায় , একটু  পাখার  ঝাপট --কি  জানি  কোন  রাতচরা  পাখি  অদ্ভূত  মন কামনার  সুরে  ডাকতে  ডাকতে  উড়ে  যায়  মাথার  ওপর  দিয়ে--আর রাত আড়াই টে  নাগাদ আমাদের গুরুদাস  hault  station  এ ব্নাশী বাজিয়ে  ছেড়ে  দায়  কোন  এক দুরপাল্লার ট্রেন,তার ঘুমন্ত বুকে চেপে  আমার মনটাও  বেরিয়ে পরে মানস-ভ্রমনে...
এরকম রাত মানে  অল্প কিছু পড়ার ভান আর বারবার বারান্দায়  দাড়িয়ে থাকা বা জানলা দিয়ে অপলক চেয়ে থাকা--ওই রাস্তা দিয়ে নারী কুকুরটা নি:শব্দ পায়ে পারা ঘুরতে বেরোলো বুঝি--ওই কাদের বাড়িতে এখনো এল জ্বলছে কাকিমার  ঘুম আসেনি নিশ্চয় আজ ও..আমাদের বাড়ির ঠিক সামনে একটা শিরিষ গাছ আছে, যার পাতাগুলো  সন্ধ্যে হলেই নুয়ে  পড়ে ঝাড় লন্ঠনের  মত দেখায়..ছোটবেলায় তার  ছায়া তে ভয় পেতাম  পরে ওই দুলন্ত ছায়াগুলো  ও আমার রাতের অংশ হয়ে গেল..এরকম রাত মানে walkman  এ প্রিয় গান শুনে সুরের অনুরননে ডুবে যাওয়া , বা কোনো প্রিয় বই প্রিয় চরিত্র  খুব প্রিয় অশ্রু-বিন্দু...


সেই রাত গুলো কবেই ফেলে এসেছি--আজ চার বছর হলো  রোজকার সেই চেনা রাতের ছবি  টা আর দেখিনা..শুধু তার কিছু গন্ধ বুঝি রয়ে গাছে আমার স্মৃতির আনাচে কানাচে--নিঝুম হোস্টেল এর badminton  court  এ তাকে খুঁজে নিতে চেয়েছি,কিম্বা jnu এর ছায়া মাখা  অরণ্য-বীথিতে--আজ ও পাশের গলফ-course  এ চলে যাই সঙ্গী পেলে..আর পৃথিবীর অন্য  প্রান্তে আমার চির -চেনা সেই মধ্য-কলকাতার শান্ত রাত গুলো বৃথাই  ঝরে  যেতে  থাকে--রোজ...







২টি মন্তব্য:

  1. না না বৃথা কেন স্বাগতা, তোমার জন্যই ঝরে, তুমি টের পাও না। সুন্দর লিখেছ। বাতানুকূল ঘর বড় বিচ্ছিরি, মনে হয় নির্বাসনে আছি।

    উত্তরমুছুন

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...