যে কোনো শহর শুধু কিছু বাড়ি-ঘর, বা রাস্তা ঘাট নিয়ে গড়ে ওঠে না, প্রতিটি শহরের ই পরিচয় হয়ে থাকে মনের মধ্যে ছাপ ফেলা তার ছবিটি--কিছু স্মৃতির collage এ, কিছু অনুভূতির ভান্ডারে, কিছু বা তার নিজস্ব চরিত্রএ ...আজকে এক শহরে বসে ফেলে আসা অন্য শহরের জন্যে এই যে মন-কেমন, এ তো সেই দিন গুলোর জন্যে মন-কেমন ও বটে, বা সেই মানুষগুলোর জন্যে, যারা শহরটা কে রঙিন করে রেখেছিল...
এই সব জেনেরাল statement এর পিছনে আছে কিন্তু আমার সেই আদি ও অকৃত্রিম nostalgia ...এবারে যার কেন্দ্র হলো দিল্লি..
আমার জীবনের খুব প্রিয় দুটো বছর কেটেছে যে শহরের বুকে, যে শহরের থেকে আমি শিখেছি বড় হযে ওঠা কাকে বলে, যে শহর জানে আমার প্রথম অনেক কিছুই...
আমার জীবনের খুব প্রিয় দুটো বছর কেটেছে যে শহরের বুকে, যে শহরের থেকে আমি শিখেছি বড় হযে ওঠা কাকে বলে, যে শহর জানে আমার প্রথম অনেক কিছুই...
প্রথম দিল্লি আসা আমার দিল্লি স্কুল এর পরীক্ষা দেবার জন্যে--সেবারে থেকেছিলাম এক আত্মীয়ের বাড়ি,নয়দা এ.প্রথম রাজধানীর সুখযাত্রা (যাই বল, আন্তর্জাতিক বা আন্তরাষ্ট্রীয় উরান এর থেকে অনেক সুখদ এবং তৃপ্তি র এই রাজধানী-যাত্রা, আমার দিল্লি র দুটো বছরের integral পার্ট :)) র পর যখন গাড়ি হুহু করে পেরিয়ে যাচ্ছে দিল্লির অভিজাত বাড়ি ঘেরা রাস্তা, দুরে ইন্ডিয়া গেট দিল্লির চেনা skyline মনে করিয়ে দিচ্ছে (অনেক পরে এই জায়গা গুলোর , অর্থাত রাজপথ আর জনপথ এর funda টা জেনেছিলাম)--তখন প্রথম দর্শনে দিল্লি কে অভিজাত এক পুরুষের মত লেগেছিল--যার সর্বাঙ্গে দারঢ আর কৌলিন্য ঝরে পড়ছে, কুতুব এর উচু মাথায় যার আকাশচুম্বী স্পর্ধা, পুরানা কিল্লার পাথরে পাথরে যার অতীত গৌরবের সাক্ষর..অথচ এ শহর ইতিহাসের শহর হয়েই থেমে থাকেনি--অগ্রা যেমন ইতিহাস কে নিয়েই বেচে আছে,যতটুকু ইতিহাস ততটুকু তেই আগ্রার সৌন্দর্য; কিন্তু দিল্লি র চরিত্র সুধু ইতিহাস এ আবদ্ধ নেই...বাবুর,আকবর, তুঘলক এর নামাঙ্কিত রাজপথে আজকের শাসকদের মহার্ঘ্য বাংলো, পুরনো স্থাপত্যের বাড়িতে ঠাই করেছে হাল ফাসনের সরকারী অফিস, শহরের বুক জুড়ে ঘুরে বেড়ানো আধুনিক পোশাক ও আধুনিক মননের যুব-ভারত এক আশাবাদী ভবিষ্যতের কথা বলে--মোট কথা, মুগ্ধ করার সব উপাদান ই আছে দিল্লির এর অনবদ্য চরিত্র এ ..
আর এই অনন্য শহরের বুকে যখন খুঁজে পাওয়া যায় অনন্য এক জীবন ও? যখন প্রথম বার বাড়ি থেকে দুরে থাকার দুখ ভুলিয়ে দেয় আড্ডা-মজায় কেটে যাওয়া রাত গুলো,বন্ধু হযে ওঠা senior দাদা-দিদি রা...অজস্র বাজে বকায়
প্রথম খুঁজে পাই মানে হারানোর মানেটা ...নতুন এক পরিবেশ, নতুন এক জীবনের গন্ধে ভরে থাকে আমার বিস্ময়-মুগ্ধ মন...তার ই ফাঁক এ কখন টের পাই নতুন সব মনে হওয়া , নতুন সব ইচ্ছেদের...
হঠাত ইচ্ছে এ করিম এর নাহারি খেতে ভোর রাতে উঠে রওনা দেয়ায়, রাতে মেস এর বদলে গালিব এর কাবাব দিয়ে dinner সারায়, ইচ্ছেমত দিল্লি hut এর পসরায় হারিয়ে গিয়ে, দিল্লি এক অনিবার্য নেশায় মাতাল করে তোলে আমায়..
আজ যখন ফিরে তাকাই ওই দুটো বছরের দিকে, হয়ত অনেক পাওয়া না পাওয়া র হিসেব জমে আছে খাতায়, হয়ত অনেক কাজে ফাকি দেওয়ার ইতিহাস আজ আপসোস এনে দেয়, কিন্তু সব ছাপিয়ে মনে হয়, বড় বেশি করে বেচে ছিলাম ওই দুটো বছর...পারা-না পারায়, বোঝা-না বোঝায় সে এক নিজেকে হারানোর উত্সব, যার ঠিক-ভুল বিচার করতে যাওয়া র স্পর্ধা আমার নেই...দিল্লি আমার কাছে সেই সব ঝরা সময়ের নির্যাস, দিল্লি আমার কাছে আমার প্রথম মুক্তির বাতাস--তাই হয়ত অনেক তুঘলক-লোদী-মুঘল দের মতই, দিল্লি আমার ও সপ্নের শহর--এবং হয়ত আমার ই মত অনেক সপ্ন-বিলাসীর...