মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১১

স্বপ্নের নাম দিল্লি..

যে কোনো শহর শুধু কিছু বাড়ি-ঘর, বা রাস্তা ঘাট নিয়ে গড়ে ওঠে না, প্রতিটি শহরের ই পরিচয় হয়ে থাকে মনের মধ্যে ছাপ ফেলা তার ছবিটি--কিছু স্মৃতির collage এ, কিছু অনুভূতির ভান্ডারে, কিছু বা তার নিজস্ব চরিত্রএ ...আজকে এক শহরে বসে ফেলে আসা অন্য শহরের জন্যে এই যে মন-কেমন, এ তো সেই দিন গুলোর জন্যে মন-কেমন ও বটে, বা সেই মানুষগুলোর জন্যে, যারা শহরটা কে রঙিন করে রেখেছিল...
এই সব জেনেরাল statement এর পিছনে আছে কিন্তু আমার সেই আদি ও অকৃত্রিম nostalgia ...এবারে যার কেন্দ্র হলো দিল্লি..


আমার জীবনের খুব প্রিয় দুটো বছর কেটেছে যে শহরের বুকে, যে শহরের থেকে আমি শিখেছি বড় হযে ওঠা কাকে বলে, যে শহর জানে আমার প্রথম অনেক কিছুই...
প্রথম দিল্লি আসা আমার দিল্লি স্কুল এর পরীক্ষা দেবার জন্যে--সেবারে থেকেছিলাম এক আত্মীয়ের বাড়ি,নয়দা এ.প্রথম রাজধানীর সুখযাত্রা (যাই বল, আন্তর্জাতিক বা আন্তরাষ্ট্রীয় উরান এর থেকে অনেক সুখদ এবং তৃপ্তি র এই রাজধানী-যাত্রা, আমার দিল্লি র দুটো বছরের integral পার্ট :)) র পর যখন গাড়ি হুহু করে পেরিয়ে যাচ্ছে দিল্লির অভিজাত বাড়ি ঘেরা রাস্তা, দুরে ইন্ডিয়া গেট দিল্লির চেনা skyline মনে করিয়ে দিচ্ছে (অনেক পরে এই জায়গা গুলোর , অর্থাত রাজপথ আর জনপথ এর funda টা জেনেছিলাম)--তখন প্রথম দর্শনে দিল্লি কে অভিজাত এক পুরুষের মত লেগেছিল--যার সর্বাঙ্গে দারঢ আর কৌলিন্য ঝরে পড়ছে, কুতুব এর উচু মাথায় যার আকাশচুম্বী স্পর্ধা, পুরানা কিল্লার পাথরে পাথরে যার অতীত গৌরবের সাক্ষর..অথচ এ শহর ইতিহাসের শহর হয়েই থেমে থাকেনি--অগ্রা যেমন ইতিহাস কে নিয়েই বেচে আছে,যতটুকু ইতিহাস ততটুকু তেই আগ্রার সৌন্দর্য; কিন্তু দিল্লি র চরিত্র সুধু ইতিহাস এ আবদ্ধ  নেই...বাবুর,আকবর, তুঘলক এর নামাঙ্কিত রাজপথে আজকের শাসকদের মহার্ঘ্য বাংলো, পুরনো স্থাপত্যের বাড়িতে ঠাই করেছে হাল ফাসনের সরকারী অফিস, শহরের বুক জুড়ে ঘুরে বেড়ানো আধুনিক পোশাক ও আধুনিক মননের যুব-ভারত এক আশাবাদী ভবিষ্যতের কথা বলে--মোট কথা, মুগ্ধ করার সব উপাদান ই আছে দিল্লির এর অনবদ্য চরিত্র এ ..
আর এই অনন্য শহরের বুকে যখন খুঁজে পাওয়া যায় অনন্য এক জীবন ও? যখন প্রথম বার বাড়ি থেকে দুরে থাকার দুখ ভুলিয়ে দেয় আড্ডা-মজায় কেটে যাওয়া রাত গুলো,বন্ধু হযে ওঠা senior দাদা-দিদি রা...অজস্র বাজে  বকায়
প্রথম খুঁজে পাই  মানে  হারানোর  মানেটা ...নতুন এক পরিবেশ, নতুন এক জীবনের গন্ধে ভরে থাকে আমার বিস্ময়-মুগ্ধ মন...তার ই ফাঁক এ কখন টের পাই নতুন সব মনে হওয়া , নতুন সব ইচ্ছেদের...
হঠাত ইচ্ছে এ করিম এর নাহারি খেতে ভোর রাতে উঠে রওনা দেয়ায়, রাতে মেস এর বদলে গালিব এর কাবাব দিয়ে dinner সারায়, ইচ্ছেমত দিল্লি hut এর পসরায় হারিয়ে গিয়ে, দিল্লি এক অনিবার্য নেশায় মাতাল করে তোলে আমায়..

আজ যখন ফিরে তাকাই ওই দুটো বছরের দিকে, হয়ত অনেক পাওয়া না পাওয়া র হিসেব জমে আছে খাতায়, হয়ত অনেক কাজে ফাকি দেওয়ার ইতিহাস আজ আপসোস এনে দেয়, কিন্তু সব ছাপিয়ে মনে হয়, বড় বেশি করে বেচে ছিলাম ওই দুটো বছর...পারা-না পারায়, বোঝা-না বোঝায় সে এক নিজেকে হারানোর উত্সব, যার ঠিক-ভুল বিচার করতে যাওয়া র স্পর্ধা আমার নেই...দিল্লি আমার কাছে সেই সব ঝরা সময়ের নির্যাস, দিল্লি আমার কাছে আমার প্রথম মুক্তির বাতাস--তাই হয়ত অনেক তুঘলক-লোদী-মুঘল দের মতই, দিল্লি আমার ও সপ্নের শহর--এবং হয়ত আমার ই মত অনেক সপ্ন-বিলাসীর...



বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১১

শীত এর শহর...

ঋতুর হিসেবে এখন হেমন্ত, কিন্তু এই পরবাস এ শীত এর আসার সময় হয়ে গেছে প্রায়...সকালের মিঠে রোদ আর ঠান্ডা হাওয়ার গায়ে শীতের আসার বার্তা লেখা ...দুপুরের দিকে মিলিয়ে যায় সেই সামান্য শীতের আমেজ টুকু, কিন্তু সকালের ওই ঠান্ডা হাওয়া মেখে ক্লাস এ যাওয়ার অনুভূতিটা, গরম ধওয়া ওঠা উষ্ণ চায়ের জন্যে তেষ্টা টা, আর রাস্তার পাশে গাছের লাল কমলার "ফল কলর্স " এ সেজে ওঠা রূপ টা মনে করিয়ে দেয়: শীত এসে গেল..আর অমনি মনে পরে যায় আমার শহরের শীতকাল কে...
কলকাতার শীত বলতে মনে পরে আমার স্কুল এর দিনগুলো, টুইশন থাকত সকাল সকাল, আর একে আমি ঘুমকাতুরে মানুষ তার ওপর শীতের সকালে  পড়তে যাওয়া-- অসহনীয় অত্যাচার মনে হত..ফাকা বাস ঢিকিয়ে ঢিকিয়ে চলেছে আর জানলার পাশে বসে আমি ঘুমঘুম চোখে দেখছি কুয়াশার আড়ালে আমার শহরের জেগে ওঠা, আর মাঝে মাঝেই বাবা এবং আশপাশের কাকু-প্রতিম মানুষজন ধমকে বলছেন জানলাটা বন্ধ করে দিতে--এই স্মৃতি টা কলকাতার শীতের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে গেছে আমার মনে :) আমাদের বাড়ির পাশে একটা দেহাতি বস্তি আছে তারা সকালে গুলের আগুনে উনুন জালত, সেই ধোয়ার ওম এ যেন পারাটার শীত ভাব কাটতো ; হাই তুলে উঠে কাজে লাগত যে যার মত...
শীতের সকালের থেকে আমার অনেক বেশি প্রিয় শীতের দুপুর...ঠান্ডা জলে হী-হী করতে করতে স্নান করেই চলে যেতাম বিরাট ছাদে: মাদুর পেতে বসে চুল শুকনো; সঙ্গে অবশ্যই থাকত পরার বইপত্র কিন্তু পাহারা দেবার লোক তো ছিলনা কাজেই... 
ছাদ এ ঘুরে ঘুরে দেখতাম আশপাশের বাড়িগুলো কে, মিঠে রোদ গায়ে মেখে নিতে নিতে তাদের গৃহস্থালীর খুটিনাটি দেখতে ভারী ভালো লাগত..বাপারটা খুব ই নাক গলানো শোনাচ্ছে ঠিক ই,কিন্তু ওই যে কোনো বাড়ির ছাদ এ কেউ লেপ রোদে দিছে, কোনো ঠাকুমা আচারের শিশি জারাতে দিল, বাড়িগুলো র রান্নাঘর থেকে সেই অবিস্মরণীয় বাঙালি-রান্নার আওয়াজ আর মাছভাজা ফুলকপি কড়াই শুটি রান্নার মিশ্র গন্ধটা--এগুলো আমার শীতের দুপুর টাকে যেন ভরে রাখত  ...আর  ছিল মাথার  ওপরের নিল আকাশ...শীতকালের মত পরিষ্কার নিল আকাশ কলকাতা অন্য কোনো সময় দেখতে পায় না বলেই আমার ধারণা...তার বুকে সেই চিল এর ছোট থেকে আরো ছোট হয়ে যাওয়া আর গোল হয়ে উড়তে উড়তে আসতে আসতে পুরো অঞ্চল তার এদিক থেকে ওদিক ঘুরে আসার জ্যামিতি টাও ভারী আকর্ষনীয় লাগত... 
কলকাতায় শীত ভারী সল্প স্থায়ী...কিন্তু তার জন্যই বোধয় শীতের গল্প জমে রয়েছে বুক ভরে--শীত মানে রঙিন সব  sweater আর শাল এর বাহার , শীত মানে হাজারো special খাওয়া দাওয়া , শীত মানে ধুলো -ওঠা ময়দান  এ বইমেলা , circus আরো কত কি ...সেসব  গল্প ভাবতে  বসব  অন্য একদিন --এখন romantic অতীত -ভাবনা   ছেড়ে  ফিরে  আসা  যাক  অস্টিন  এর শীত আসার এই সন্ধ্যেতে , যখন  আমার সামনে  এখনো  অনেকগুলো  কাজ  জমে আছে  ....





রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১১

এমন একটা দিনে  মন বসানো যায় নাকি econometrics এর পড়ায়? বাইরে যখন আকাশের গায়ে কালো মেঘগুলো আটকে আছে অদ্ভূত বিষন্নতা নিয়ে, জানলা দিয়ে দেখা দুরের highway টা আর তার ওপর দিয়ে সন সোনিয়ে চলে যাওয়া গাড়ির সরত কেমন যেন আবছা লাগছে, এ যেন আমার চেনা প্রবাস নয়, যেন ওই মেঘের ছায়ায় অস্টিন শহরটা র গায়ে লেগেছে কলকাতার ছাপ..

আমার শহরেও যে এমন ই মেঘ করত, এখনো হয়ত করে..ঝুপসি মেঘের আড়ালে শহরের অকাল-সান্ধ্য দিন শুরু হয়, মাঝে মাঝে অঝর বর্ষণে ফুটপাথ এর দোকান গুলোয় ত্রিপল এর ছাউনি লেগে যায়, রাস্তায় ছাতার ভিড় আর ছোটছোট গর্তে জমে ওঠা জলের ছপছপ...সেই সময় টা কলকাতার বুকের খুব কাছ ঘেষে থাকলে, এই যেমন রাস্তায় ছাতার দঙ্গলে মিশে থাকলে, বা ভিড় বাস এ জাম এ আটকে থাকলে, কলকাতা কে ভালো লাগেনা, পাচপাচে গরম আর ঘামের গন্ধে আকাশের মেঘলা সৌন্দর্য আড়াল হয়ে যায়--কিন্তু যদি একটু দুরে সরে আসা যায়, এই ধর বারান্দায় chair  এ বসে, গরম চায়ে ছোটছোট চুমুক দিতে দিতে, বা আপন মনে হাটতে হাটতে saltlake বা রাজারহাটের একলা রাস্তায়, বা সেই যেমন দেখেছিলাম পার্ক ষ্ট্রীট এর বহুতল এর ১৬ তলা থেকে --তখন কলকাতার মত রূপসী হয় ই না...আবছা বৃষ্টির জলছবিতে ধুলো-মাখা কলকাতা হঠাত ই অনেক টা বেশি সবুজ আর অনেকটা বেশি স্বপ্ন ময় হয়ে ওঠে...

এরকম মেঘলা দিন মানেই "মন খারাপ করা " বেলা...মেঘের গায়ে গায়েই যেন অনেক nostalgia  রাখা আছে আমার..অনেক গুলো একলা ঘরে জানলা দিয়ে আকাশ দেখতে দেখতে সময়ের খেই হারিয়ে ফেলা দিন, অনেক গুলো আপন মনে অকারণ মন খারাপের সময় এক ছুটে মায়ের কাছে গিয়ে অবল-তাবোল গল্প ফেদে বসার দিন, অনেক গুলো tuition থেকে ফিরতি পথ ঝেপে বৃষ্টি এলে ছাতা না খুলে অঝর ভেজার দিন...আজ ও, এই বিদেশী মেঘের গায়েও দেখি সেই সব ইতিহাস যত্নে খোদিত , তাই তার দিকে চাইলেই ভীষণ করে মনে পড়ে যায় আমার বড় হবার দিনগুলো..জানি না কখন এতটা বড় হয়ে গেছি যে  সেই দিনগুলো ঢুকেই গাছে ইতিহাস এর পাতায়, জানি না কোনদিন এতটাও বড় হতে পারব কিনা যে মেঘের গায়ের ওই লেখাগুলো পড়তে ইচ্ছেও হয়ত আর হবে না...ততদিন নাহয় মেঘলা এইরকম দিনগুলো হয়ে থাক আমার মন-কেমন এর সহচর...


স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...