রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

নাম-মাহাত্ম্য

কবি বলে গেছেন নামে কি এসে যায়, কিন্তু বাস্তব হলো খুব-ই এসে যায় অনেক-কিছুই এসে যায়. কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন যেমন হাসির খোরাক হয় জটিল অপ্রচল নাম যেমন সমীহের উদ্রেক করে তেমনি নাম অনেক expectation তৈরী করে. এবার পুজোয় যাওয়ার আগে একজন কর্মন্কর্তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল;নাম রায়ান চৌধুরী. নাম শুনে তো আমরা বেশ ফ্লাম্বয়েন্ট ঝকঝকে এক তরুণ এর অপেক্ষায় বসে আছি--যখন মাথাজোড়া টাক আর নিপাট ভালোমানুষী হাসি নিয়ে খর্বকায় মানুষটি এসে উপস্থিত হলেন আমরা অপ্রস্তুতের একশেষ  :)

আমার নিজের নাম টা আমার কাছে খুব প্রিয়. সত্যি করে এমন একজন যাকে সবাই স্বাগত জানাবে তেমন টি হয়ে উঠতে পারিনি কিন্তু বাবা-মার প্রত্যাশার মর্যাদা রাখতে চেষ্টা জারি আছে জোরদার :) আর এই নাম টার সঙ্গে এমন একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সেই ছোট্ট থেকেই এ সম্পর্কে আমি খুব স্পর্শকাতর. সংস্কৃত "স্বাগতা" নাহয় বাংলায় "সাগতা" এ পর্যবসিত হলো তাও সই, কিন্তু ইংরেজি বানানেও যখন sagota হয়ে যেত মেনে নিতে পারতাম না মোটেই. আমার খুব ঘনঘন যাওয়ার একটা জায়গা ছিল ডাক্তার খানা; আর সব ডাক্তার ই বানানের ব্যাপারে এক-ই ভুল করতেন,কাজেই ছোটবেলায় আমার অভ্যেস হয়ে গেছিল ডাক্তার নাম জিগেশ করলে বলে ওঠা s-w-a-g-a-t-a :) লোকে ভাববে পাকামি কিন্তু আমার কাছে তো সেটা অস্তিত্ব-সংকট!
অবশ্য মোটে পছন্দ ছিল না (আজ ও নয়) আমার ডাকনাম গুলো. সংখ্যায় বেশ অনেকগুলো কিন্তু একটাও আমার মনের মত না; তাই বাড়িতে খুব করে বলে দেওয়া ছিল বন্ধুদের ফোন এলে খবরদার যেন আমায় ডাকনামে চেচিয়ে না ডাকে, বলতে হবে "স্বাগতা তোর ফোন" .ছেলেমানুষী কান্ড দেখে বাবা মা যে খুব ই মজা পেতেন তাতে সন্দেহ নেই. এই ক্ষোভ থেকেই ৫ বছর বয়েস এ নিজের ডাকনাম দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম "পাপেলা", কেউ ডাকনাম জানতে চাইলে সেটাই বলে দিতাম গম্ভীর ভাবে, কিন্তু মায়ের পাশ থেকে ফিকফিক করে হেসে ফেলা দেখে কেউ আর মেনে নিল না সে নাম টা, আমি সেই পচা ডাকনামেই ডাকিত হতে থাকলাম :(

নিজেকে সর্বশক্তিমান মনে হলো ক্লাস ২ তে,বোন এর নামকরণের দায়িত্ব বাবা মা দিয়ে দিল আমাকে! নেহাত ই বাচ্চা তখন আমি নইলে দেখিয়ে দিতাম ভালো নাম কাকে বলে, কিন্তু যেটা ঘটল সেটা হলো আমি ছোট্ট বোনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ দেখে নাম দিলাম শতরূপা আর এখনো অবধি এই cliche নাম টা দেওয়ার জন্যে বোনের থেকে অনুযোগ শুনতে হয়. প্রতিশোধ এ আমি ও থেমে থাকিনা অবশ্য--যখন তখন যা-তা নামে দেকে অর ডাকনামের বারোটা ই বাজিয়ে দিয়েছি আমি :)

আরো অনেক ব্যাপারের মত এই ব্যাপারটাতেও রবীন্দ্রনাথ এর ওপর হিংসে হয় আমার: ভদ্রলোক নাম নিয়ে কত experiment  এর সুযোগ ই পেয়েছেন!কেউ কি দেখতে দিয়েছিল যে ওনার দেওয়া নামের বোঝা যে শিশুদের ঘাড়ে চাপানো হয়েছিল তারা আদৌ তাতে খুশি ছিল কিনা? বা রূপ্বানী র নাম অন্য কিছু হলে সেটা আরও কিছুদিন চলত কিনা? ইশ আমার যদি এরকম এত্ত নাম দেওয়ার সুযোগ থাকত...

৩টি মন্তব্য:

  1. ভাই বোন থাকার আরো একটা সুবিধে,নাম রেখে ভালবাসা বা প্রতিশোধ, দুটোই প্রমাণ করার সুযোগ থাকে। তোমার ভালনামটা সত্যি ভাল। লেখাটা পড়তে পড়তে আশায় ছিলাম, ডাকনামটা বলবে বুঝি। কই বললে না তো? কত আর খারাপ হবে? আর সত্যি বলছি, ডাকনাম একটু খারাপ না হলে ভাল দেখায় না।

    উত্তরমুছুন
  2. "কটকটি চেপ্টি ফুলঝুরি / ডাকবে না নামগুলো বিচ্ছিরি ":)

    উত্তরমুছুন
  3. তোমার নাম টা আমার ভারী পছন্দের কুন্তলা দি, শুনলেই কেমন যেন রূপকথার সেই কন্যের কথা মনে আসে, কুচবরণ কন্যা তার মেঘবরণ চুল..হেসো না আমার অনেক নাম শুনেই এরকম এক একটা ছবি মনে চলে আসে :)

    উত্তরমুছুন

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...