মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল, ২০১২

সকাল থেকে সারা দুপুর/ইট সাজিয়ে ইটের উপর/খেয়াল মত দেয়াল তুলি গড়ে...

হঠাত হঠাত ইচ্ছে হয়  না, আমি  যদি আমি না হয়ে অন্য কেউ হতাম ভাবতে? কেমন হত জীবন টা--কোন নিয়মে ব্নাধা থাকত  আমার চলা-বসা--কারা থাকত আমার চারপাশে...এখন এই বিকেল এ বসে বসে আমার এরকম ই একটা ভারী অদ্ভূত ভাবনা আসছে--শুনে আমায় বদ্ধ পাগল ভাবা টা একদম ই ন্যায্য, এমনকি আমার নিজের ও ঘোরতর সেই সন্দেহ ই হচ্ছে, তবু মনে হচ্ছে যখন, লিখেই ফেলি.. 


দুপুরে হঠাত ই গুনগুনিয়ে মনে এলো ছোট্টবেলার কবিতা: "আমি যে রোজ সকাল হলে/যাই শহরের দিকে চলে/তমিজ মিয়ার গরুর গাড়ি চড়ে"..হঠাত ই ভীষণ ইচ্ছে করলো: আমি যদি এমনি কেউ হতাম? সকাল হতেই কোনো ছুচলো-দাড়ি-চেক-লুঙ্গির তমিজ মিয়ার গরুর গাড়িতে চড়ে চলে যেতাম শহরের দিকে..হয়ত আমার বাড়ি মফস্বল এ,হয়তো একতলা খোলার ঘর, সামনে একফালি মাটির উঠোন, বউ যত্ন করে দুটো লঙ্কাগাছ জবাগাছ লাগিয়েছে বেড়ার ধার ঘেষে, যাবার সময় সে বুঝি খোদাতালার কাছে দুয়া মেগে নয় রোজ একবার..
হয়ত আমার পাড়ার পথ টা ভাঙ্গাচোরা মাটির,ক্য়াঁচ কন্চ করতে করতে গরুর গাড়ি এগিয়ে যায় শালুক-ভর্তি ডোবা টার পাশ দিয়ে..গরুর গাড়ির জমানা যখন তাহলে হয়ত পাশের মাঠ টা খালি ই পরে আছে বিকেলে ছেলেদের ফুটবল খেলার জন্যে, গোসাইতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় টা নিশ্চয় তখন ওঠেনি, বা কোনো প্রমোটার এর স্তুপিকৃত বালির তলাতেও হারিয়ে যায়নি মাঠ টা..সেই মাঠ পিছনে রেখে  আমার গাড়ি ওঠে পাকা পথ এ , মুখের মুদির দোকান থেকে রহিম-চাচা হাত নাড়ে রোজকার মত..শুরু হয়ে যায় আমার দিন..


শহর কেও তো আমি দেখি অন্যভাবে, আধা-সমাপ্ত বাড়ির ছাত পেটানোর ফাকে দেখে নি নিচে বিছিয়ে থাকা শহর, তার দুপুরের ভাতঘুম টুকু তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি আমার তিন তলার ছাদ থেকে..পাশের স্কুল এ ছেলে রা নামতা পড়ে কেমন একঘেয়ে আওয়াজ এ ..রাস্তা থেকে হাক শোনা যায় বাসন চাই বা শিল কাটাবে-র.. বাড়ির থেকে রান্নার আওয়াজ থেমে যায় ,বাড়ির  মেয়েদের গলাতেও নেমে আসে ঝিম-ধরা মৃদুতা...মাঝের উঠোনে বাসন জমা করে রেখে ছায়া-ছায়া অন্দরে চলে যায় বড়বৌ-সেজবৌ রা...বুঝি ওবাড়ির কোনো ছেলেমানুষ বউ এই অবসরে একটা নভেল হাতে উঠে আসে ছাদ এ, মাদুর পেতে রোদে পিঠ দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে..দেখি ডুরএ-শাড়ি-বেণী-দোলানো মেয়েটি মায়ের পানের ভাগ নিতে উঠে আসে ছাদে,অমনি বায়না ধরে গল্প বলার..মা-ও বুঝি আনমনা হয়ে শুরু করে দেয় নিজের অনতিপূর্ব বালিকা বেলার কথা..নিঝুম দুপুরটার সঙ্গে মিশে গিয়ে আমি ঢালাই করি ছাদ আর দেখি...আমার ও জানতে ইচ্ছে করে আমার সেই লঙ্কাগাছের বেড়ার ঘরটিতে আমার আমিনা এখন কি করছে,নিদ্রা-অলস দুপুরে আমার পারা ও কি এমন ই নিঝুম হয়ে ওঠে? 




মন-কেমন করা  বেলা ঢলে পড়ে, শহরের আকাশে  গোধুলির  রং  ধরে...আলসেমি ছেড়ে উঠে বসে পারা টা..কলে জল এসে যেতেই  বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয় ব্যস্ততা..ঝি এসে পড়ে, সদ্য -ঘুমভাঙ্গা মুখে  চুলগুলো এলো খোপায়  জড়িয়ে  নিতে নিতে আবার সংসারের কাজে লেগে পড়ে বড়বৌ..ওবাড়ির ছাদ থেকে মা-মেয়ে  নেমে আসে,গা ধুয়ে অপেক্ষায় থাকে অফিস্বাবুটির ফেরার..পাশের স্কুল বাড়ির ছেলেরা ঘন্টার আওয়াজ হতে না হতে ঝরনার মত নেমে আসে পথ এ,তাদের কোলাহল এ কোথায় মিলিয়ে যায় স্তব্ধ দুপুর টা ... পাখিদের মত নীড়ে ফেরার নেশায় আমিও নেমে আসি ভারা বেয়ে, জলদি পায়ে হাটা লাগাই মোড়ের দিকে, যেখানে তমিজ মিয়া দাড়িয়ে আছে টার গাড়িটি নিয়ে..আবার সেই পথ, আবার সেই মোড় ঘুরে কাচা-সড়কে উঠে পড়ি...হঠাত কি মনে হতে মুদির দোকান থেকে দু পয়সার মুড়কি কিনে নি তারপর আবার সেই মাঠ সেই ডোবা আর রাস্তার ধারে বেড়ার ফাকে আমিনার অপেক্ষারত চোখ--যার জন্যে সারাদিনের খাটুনি গোলামী সব সয়ে যায়, আরো একটা দিন বেচে থাকার ভারী ইচ্ছে করে..


 এমন যদি হত আমার জীবন? এইসব জটিলতা আরো চাওয়া আরো পাওয়া র থেকে অনেক দুরে এক চত্ব জীবন, ছোট সুখ ছোট আশায় ভরপুর..?আজকের সন্ধ্যেতে কেন যে সেই না-পাওয়া জীবন না দেখা মফস্বল না বোঝা সরলতার জন্যে মন কেমন করছে...বললাম না, উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি কিনা নিজের ই ঘর আশংকা.. 



1 টি মন্তব্য:

  1. হাহা স্বাগতা, একটুও উন্মাদ হচ্ছো না। অবশ্য হোমওয়ার্কের চাপে যদি হওও, তাহলেও কিছু বলার নেই। কিন্তু তোমার স্বপ্নগুলো সুন্দর, একদম ছবির মতো।

    উত্তরমুছুন

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...