শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬

বাসা

"সবজিইই-সবজিইই"
ডাকটা দূরে মিলিয়ে যাবার আগেই আবার ডানার ঝটপট। সুনয়নী দৌড়ে বারান্দায় এসে পৌঁছতে না পৌঁছতেই পায়রাটা উড়ে গেলো। পাশের কার্নিশে বসে লাল চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সুনয়নীকে দেখছে ও। সাধারণ ধূসর রং, স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ই মোটা, আর ওর গুটিয়ে রাখা বাঁ ডানাটা একটু বাঁকা, এই কদিনে চিনে গেছে সুনয়নী। সকালের রোদ পুবে বারান্দায় একটু জমে উঠতে না উঠতে চলে আসে ও, প্রথমে সাদা রেলিং এ বসে খানিক ইতস্তত করে, তারপর অভ্যস্ত পায়ে মেঝে পেরিয়ে ঘরের চৌকাঠে পৌঁছে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ভিতরটা, বোধয় খুঁজতে চায় কোনো পরিচিত মুখ, কিন্তু এর মধ্যেই সুনয়নীর সতর্ক কানে পৌঁছে যায় তার সাড়া, কাজ ফেলে দুদ্দাড় দৌড়ে আসে এলো-খোঁপার গনগনে মুখের সুনয়নী। রোজ সকালের এক চিত্র।
বাড়ি ভাড়া নেবার সময়ে ই বলেছিলেন বটে নুয়ে পড়া সাদা খোঁপার বাড়িওয়ালি ঠাকুমা।
"আগের ভাড়াটে বৌটির ভারী শখ ছিল পশু-পাখির, জানো মা। চাটার্জিদের বৌ, তবু কোনো বাছবিচার নেই গো! সকাল-সন্ধ্যেয় পাড়ার সব কুকুর-বেড়াল কে দেবার জন্যে একথালা ভাত নিয়ে গিয়ে দাঁড়াতো বাজারের পাশে, আর সারাদিন কত যে পায়রা-চড়াই ঘুরে বেড়াত ঘরে সে আর বোলো নাকো। কি জানি কেন হুট্ করে পাড়া ছেড়ে চলে গেলো। বৌমা একবার দেখাও করলো না...তা তাদের যাবার পরে ওই বাড়ি সাফসুতরো করতে আমার কম হ্যাপা গেলো?..প্রথম কদিন দেখো তোমায় অনেক ঝক্কি পোয়াতে হবে।"
ঝক্কি খানিক হয় বৈকি। সন্ধ্যেয় বাড়ি ফেরার পথে পায়ে পায়ে জড়িয়ে আসে হলুদ-কালোর রোগা বেড়াল, রোজ সকালে বারান্দার দরজা খোলা পেলেই উঁকি দিয়ে যায় ডানা-ভাঙা পায়রাটা। সুনয়নীর নিয়মে গড়া সংসার, সেখানে এসব অতিরিক্তর ঠাঁই নেই।
কৃশানু, তার ঠাকুরদার দেয়া আদ্যিকালের নামটাকে কাব্যিক করে যে তাকে "সুনী" বলে ডাকে, সে অবিশ্যি রোজ সকালের এই এপিসোড দেখে মজা ই পায়। "পায়রার বকবকম তো ভালো। তা না, সুনীর পছন্দ ঘরদোর সব সুনসান হয়ে থাকুক।" উত্তর দেয়না সুনী, বোঝাতে পারে না কেন ওই পায়রার ফিরে ফিরে আসা তাকে ছাপিয়ে তার ই বাড়িতে অন্য কার অস্তিত্ব খুঁজতে চায়। বোঝাতে পারে না কেন যে দিনগুলোয় কলেজ এর ক্লাস নেবার থাকে না তখন ফাঁকা বাড়িতে সেই অস্তিত্ব কেমন এক অচিন মায়ার মতো ঘিরে ধরে থাকে সুনী কে, কিসের এক অসোয়াস্তি, কিসের এক গোপন হাহাকার।

আজ ও সুনীর কলেজ যাবার নেই। মানে, যেতে চাইলেই যাওয়া যায়, কিন্তু বাড়ির থেকে কলেজ এতটাই দূরে যে নেহাত পড়ানোর না থাকলে যাবার ইচ্ছে করে না। সকালের জলখাবার খেয়ে বেরিয়ে গেলো কৃশানু। সুনীর সামনে দীর্ঘ একলা দিন পড়ে। অবশ্য আজকে কি করবে ভেবে রেখেছে সুনী। নতুন আসা বাড়িটায় এক সপ্তাও হয়নি, এখনো ভালো করে পরিচয় হয়ে ওঠেনি বাড়িটার সঙ্গে। গত কদিনের বাড়ি গোছানোর তাড়াহুড়ো শেষ এখন, আজ সুনী বাড়িটার সঙ্গে ভাব করবে সারা দুপুর জুড়ে। নতুন রঙের পলেস্তরার নিচে খুঁজে দেখবে হাত-পাল্টে-পাল্টে আসা বাড়িটার মনটা ঠিক কেমন।
কোণের ঘরের দেরাজ খুলতেই প্রথম চমক। এককোণে দুমড়ানো একটা পাতা, সোজা করে খুলে ধরতে বেরিয়ে পড়লো বাঁকাচোরা হাতের লেখায়  শব্দ: "ক্ষমা কোরো।" কোনো নাম নেই, সম্বোধন ও না। শুধু কালিপেনে লেখা শব্দগুলো যেন কেমন ঝাপসা। চোখের জল, না বাংলা-অধ্যাপিকা সুনীর অতি-সংবেদনশীল মনের ছায়া সে, বুঝে উঠতে পারল না। সেই নিয়ে যখন মনে মনে আকাশ পাতাল তোলপাড় করছে ও, তখন ই বেজে উঠল ডোরবেলটা।

অচেনা পাড়ায়, অচেনা শহরে এমন আচমকা দরজা খুলতে নেই, জানে সুনী। আই-হোল বলছে ময়লা হাপ্-শার্ট পরা উস্কো-খুস্ক চুলের একটি যুবা। দোনামোনার মাঝেই আবার বেল। আর এবারে মুখ ফেরানোর সময় তার চোখের নিচের গভীর কালো আর মুখের উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি চোখে পড়ে গেলো সুনীর।
"কাকে চান?"
চকিতে মুখ ফেরানো যুবক কিছু বলার আগেই তার আশাহত দৃষ্টি বুঝে নিলো সুনী।
"আপনি কি মিসেস চট্টোপাধ্যায় কে খুঁজছিলেন?"
আধো আশায় ফিরে দাঁড়াল যুবক: "হ্যা, উনি আছেন?"
"আপনি ভিতরে আসুন।"
 নিজেকে নিজে বুঝতে পারেনা সুনী। কিসের কৌতূহল তার? আসল কথা জানিয়ে দিয়ে বাড়ির বাইরে থেকে বিদায় দিলেই তো চলত? বড়-জোর এক গ্লাস জল দিত নাহয়? বসার ঘরে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থাকে সুনী।
"আপনি ওনার কে হন?"
"কে..মানে...না, তেমন কেউ না.."
"তবে? আপনাকে পরশু ও উল্টোদিকের ফুটপাথে দেখেছি না?" হালকা শীতল হলো সুনীর গলা।
"হ্যা, মানে....সব মালপত্র এলো, আমি ভাবলাম ওরা ফিরে এলো বুঝি। তাই...." অপ্রস্তুত ভাব ছাপিয়েও তীব্র বিষাদ চারিয়ে যাচ্ছে দাড়ি-না-কামানো গালে, চোখের কোলে কোলে।
"ফিরে এলে তো নিশ্চয় ওনারাই আপনাকে জানাতেন, তাই নয়?"
"আমি আসি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর আসব না, আপনি ক্ষমা করে দিন এবারের মতো.."
ক্ষমা...ক্ষমা... সেই হলদেটে কাগজের পাতায় ঝাপসা অক্ষর.. "আপনি বসুন, আমি আসছি।"
যুবা ন-যযৌ-ন-স্থৌ। আমপান্নার শরবত নিয়ে উল্টোদিকের সোফায় এসে বসল সুনী।
"এটা খেয়ে নিন, বাইরে তো খুব রোদ। এবারে ঠিক করে বলুন আপনি কে।"


হিরণ বাবা-মাকে যখন হারায় তখন ও তার দুনিয়া দেখার দৃষ্টি ফোটেনি। মামাবাড়ির নিরুত্তাপ দায়িত্বের মধ্যে কোনোমতে বড় হতে হতে তখন ই পরিচয় পাশের বাড়ির মল্লিকার সঙ্গে। মল্লিকার ভালোবাসায় আশ্রয় পায় পাড়ার যত আহত পশু-পাখি, আর আশ্রয় পেল জন্ম থেকে ঘর-খুঁজে-চলা হিরণ। সে আশ্রয়ে অভাব নেই অনুযোগ নেই হিসেবে নেই, নেই ভবিষ্যৎ-ভাবনা ও। ভেসে গেল হিরণ।আর ভেসে যেতে যেতে ভুলে গেলো, তার যে ভেসে যাবার অধিকার নেই, তাকে যে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘাটের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে তার অসহায়তার রশি।
মফস্বলে বিয়ের বয়েস এসে যায় আচমকা ই। মল্লিকার বাবা-মার সন্ধানে আসে শহুরে চাকুরীরত পাত্র।টুনির আলোয় পাশের মাঠের শামিয়ানা সেজে ওঠে, নিষ্ঠুর উলুধ্বনির মধ্যে দিয়ে মল্লিকা এগিয়ে চলে যায় বিসর্জনের দিকে, হাতের মুঠিতে শক্ত করে ধরে থাকা নিজের তীব্র অসহায়তার কাছে হেরে পালিয়ে যাওয়া এক কিশোরের দিশেহারা কান্নায় ভেজা দুটি আখর: "ক্ষমা কোরো।" 

নিজের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জীবন সুখের ছিল না হিরণের। দিন-আনি-দিন-খাই এর রোজনামচায় ছিলোনা কোন সান্ত্বনা। শুধু সেদিন, এই সবে সেদিন ভেঙে গেলো এই অসহ দিনযাপন।বারো বছর পরে ভিন-পাড়ার বাড়ির তেতলার বারান্দায় আবছা আলোতেও এত চেনা মুখ চিনতে ভুল হয়না। হিরণের রাজ্যে অবিশ্বাস্য ভাবে উদয় হলো এলোথেলো আটপৌরে করে শাড়ী পরা, চোখের তলায় গাঢ় কালি আর ঠোঁটের কূলে উপচানো হাসি নিয়ে, মল্লিকা। দুদিন দেখা হয়েছিল তার সঙ্গে। কি এক ব্যর্থ তৃষ্ণায় এ বাড়ির কাছেই ঘুরে বেরিয়েছে হিরণ সেই দুদিন। তারপর সেই সন্ধ্যেয় অনেক শব্দ, অনেক চিৎকার, আহত পশুর মতো ককিয়ে ওঠা কান্না মল্লিকার। পরদিন বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে ওরা। জিনিসপত্র তোলার সময় ভিড়ে একবার চোখ তুলে দেখেওনি মল্লিকা। রোজ ফিরে এসেছে হিরণ, বুঝি তারা এই ফিরে এলো। আসেনি কেউ। আর আজ, সাহস করে বেল মারতে, দরজা খুলে দিয়েছে সুসজ্জিত ঘরের সুবেশিতা কর্ত্রী সুনয়নী।


বিকেলের জল আসার আওয়াজে যখন জেগে উঠলো পাড়া, সুনীর হাতে তখনো ধরা হিরণের রোগা  শিরা ওঠা হাত। হিসেবি সুনয়নী আজ হঠাৎ বুঝতে পেরেছে তার মনের মধ্যে কি দীর্ঘ কি গভীর কাঙালপনা হাত পেতে বসেছিল এতদিন। কোথায় যেন পাড় ভেঙেছে, মল্লিকা হতে চাওয়ার ইচ্ছে বন্যার মতো ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সুনয়নীর সাজানো জীবন। আধ-খোলা দরজা দিয়ে মুখ বাড়ানো পায়রা টাও বুঝি বুঝে ফেলেছে, আজ আর কেউ দ্রুত পায়ে আসবে না তাকে বোবা-বিস্ময়ে আশাহত-চোখে ফিরিয়ে দিতে।



  


























    


















বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬

আশিয়ানা ঢুন্ডতে হ্যায়

নতুন পথিক দুজন হাতে হাত রেখে বেরিয়ে পড়েছি বিরাট এই দুনিয়ায়; আশিয়ানা খুঁজবো বলে। না জানি পথের নিয়ম, না চিনি নতুন কাছে পাওয়া এই শহরের অনধি-সন্ধিতে মিশে থাকা তার আত্মাকে। নতুন শহর, নতুন মানুষজন, নতুন অভিজ্ঞান চারদিকে ঘিরে ধরতে চায়; প্রশ্ন করে, "বাড়ি" কাকে বলে? ঠিক কতখানি আপনার হলে ইট-কাঠ-পাথরের আশ্রয় সত্তার অংশ হয়ে ওঠে, মায়ায় ঘিরে ধরতে চায়? উত্তর খুঁজি যখন বাইরের বারান্দায় থেকে অন্তহীন জীবনের স্রোত বেঁচে থাকার অনুভব দিয়ে যায় শিরায়-ধমনীতে, বুঝতে চাই যখন সন্ধ্যের বাজার-ফেরত ব্যস্ত পা ঘরে ফেরার আরাম চায়। 

তারপর, একদিন দুপুর আঁধার করে বৃষ্টি নামে। দুদিকের বারান্দা ভিজিয়ে ছাঁট এসে পৌঁছয় ঘরের অন্দরে। আলগা ছোঁয়াচ মেখে নিতে নিতে হঠাৎ আবিষ্কার করি পাশের এক ছাতিম গাছ কে, হঠাৎ বর্ষণের উল্লাসে রঙে রঙে উজ্জ্বল হয়ে থাকে নতুন পড়শী মাধবীলতা, করবি, রঙ্গনের দল। উত্তর এসে যায় খুব চেনা সোঁদা গন্ধ হয়ে, পুবে হাওয়া মেখে আমার নতুন সাজানো ঘর হঠাৎ ই বাড়ি হয়ে ওঠে।


বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

দূরে কোথায়

নিজের দুনিযাটুকুর কাছে থাকার একটা নেশা আছে সন্দেহ নেই, ঘাটের নৌকো বাঁধা থাকতে থাকতে ঘাটকে ভালো তো বেসেই ফেলে; কিন্তু হঠাত একদিন, যখন জোয়ারের ছলাত ছল এসে লাগে তার শরীরে, ঘাটের রশি তে পড়ে টান। দূরের টানে ছটফটিয়ে ওঠে মন, স্বপ্ন দেখতে থাকে না জানা সমুদ্রের, না চেনা দ্বীপের। আমার দিন-রাতে এখন সেই অপেক্ষার সুর, দূরের অপেক্ষা। যেন বাঁশি বেজে গেছে, ধোয়া ছেড়ে অপেক্ষা করছে ছোট্ট ট্রেন, চেনা স্টেশন ছাড়ার মুহূর্ত এসে গেল বলে।

এর পর কু-ঝিকঝিক যাত্রা। এর পর অন্ধকার রাতের বুক চিরে হিসহিসিয়ে ছুটে যাওয়া ট্রেন এর গতিময়তা। রাতচরা পাখির মত উদাস করে দেওয়া বাঁশি বাজিয়ে হঠাত হল্ট স্টেশন। তার ও পরে, না জানি কত পরে, একটা স্টেশন আসবে, নতুন ফোটা আলোয় মলিন হয়ে আসা পথদীপ পড়তে দেবে না নাম, ঘুমভাঙ্গা ক্লান্ত চোখে দু-চারজন নেমে আসবে এ-কামরা সে-কামরা থেকে, কেউ কেউ হট্টগোল শুরু করবে ট্রেন কি আরো দূর যাবে না, সেই নিয়ে। কুলি আর টাক্সি-চালকের পাতলা ভিড় ঠেলে বেরিয়ে পড়ব। সামনে একটা পুরনো আমলের ব্রুহাম দাড়িয়ে, আমি জানি, আমারই জন্যে। পিছনের আসনে বিছিয়ে দেব ক্লান্ত শরীর, উর্দি-পরা চালক তো জানবেই আমার কোথায় যাবার ছিল... 

তারপর পথ চলা, সবে ঘুম ভাঙ্গা সকালকে গায়ে মেখে যাত্রা। যেমন সকাল আমি হয়ত আগে কক্ষনো দেখিনি, যেমন সকাল হয়ত আগে আসেইনি এই পৃথিবীতে। শহর ছাড়াতেই প্রান্তর, কিশোর শালবন, ধীরে ধীরে বদলে যাওয়া মাটির ঢাল।  উজ্জ্বল আকাশের কোলে আস্তে আস্তে স্পষ্ট হয়ে ওঠা নীল পাহাড়ের অবয়ব। মাঝের ছোট বস্তি তে মাটির ভাড়ে এক কাপ অমলিন উষ্ণতা, রংচটা থালায় একটা টোস্ট-অমলেট খেয়েই আবার রওনা।  কোনো লক্ষ্য নেই, কোনো নাম নেই গন্তব্যের, শুধু ওই নীল অবয়বের পাহাড়ে যেন আমায় পৌছতে হবে।  
                          

তারপর চড়াই এ উঠতে থাকবে পথ, হঠাত বাঁকে একেবারে দৃষ্টিসীমায় চলে আসবে মেঘ-মাথায় ঠায় দাড়িয়ে থাকা পাহাড়... একটা, দুটো, আরো অনেক.... হালকা শীত জড়িয়ে ধরবে কিন্তু আলসেমিতে সুটকেস থেকে শীত-পোশাক বের করা আর হয়ে উঠবে না।  রাস্তার পাশ জুড়ে ঘিরে দাড়াবে পুরু মস এর নরম আস্তর ছাওয়া বর্ষীয়ান পাইনের বন। গাড়ির রেকর্ডার এ বাজতে থাকা আরতি মুখোপাধ্যায় থামিয়ে দিতে বলব এক সময়, গাড়ির ভেতর মেঘের সঙ্গে সঙ্গে ঢুকে আসবে গাড়ির আওয়াজ ছাপানো ঝি-ঝি র ডাক আর পাহাড়ের নিজস্ব সব শব্দ। পাক্দন্ডির শেষ বাঁক টা পেরিয়ে থামিয়ে দেব গাড়ি, নিচে তখন বিছিয়ে আছে ফিতের মত নীল নদী, ধাপ কেটে কেটে উঠে যাওয়া চারদিকে ঘিরে ধরা পাহাড়ের রাজ্যি-- অনেক নিচে পড়ে সবুজ-ঢালের চা-বাগান, হলদে-গোলাপী-সাদার খেলনা বাড়ির স্তুউপ, কালো সরু পথের দিশা.... অনেক নিচে পড়ে আমার চেনা বাস্তব, চেনা সফলতা, চেনা দু:খ , চেনা রাগ-- অনেক নিচে পড়ে বুঝি আমার কোথাও পৌঁছে যাবার ইচ্ছেটাও। 



স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...