শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৩

মেঘলা অস্টিন

মেঘ করলে আমার মন ভালো হয়ে যায়। অনেকদিন ধরে চেপে রাখা কষ্ট টা একটা ছোট্ট চড়াই পাখির মত ফুরুত করে উড়ে যায় মনের খাঁচা টা থেকে। বৃষ্টি-আসব-আসব ভাব নিয়ে ঘনিয়ে আসা মেঘের দিকে তাকিয়ে হঠাত খুব ভালো লেগে যায় রোজকার এই বহমানতা। ভারী-ভারী কথা, দামী-দামী চিন্তা আর কেজো ভাবনা থেকে একছুটে পালিয়ে আসি। ফোয়ারার পাশে বসে খানিক-ক্ষণ পড়া পড়া খেলা, আর তারপরেই ল্যাপটপ বই সব গুটিয়ে হাটা লাগাই বাড়ির দিকে--হ্যা, এই শহরের দু-কামরার এই "বাসা" টাকেও বাড়ি ভাবতে একটুও অসুবিধে হয়না আর, মেঘ করলেই।

য়ুনিভার্সিটি থেকে বাড়ি মিনিট চল্লিশের পথ, সোজা পথে গেলে। তবে আরেকটু ঘুরে একটা পথ যায়, সেটাও খুব দূর না; আর সেই পথটা আমার দেখা অন্যতম সুন্দর শহুরে পথ। তাই দ্বিধা না করে সেই পথেই পা বাড়াই। প্রথমে কিছুটা জুড়েই 
য়ুনিভার্সিটি-য়ুনিভার্সিটি গন্ধ মাখা-- বাইরে ছাউনি র নিচে কাঠের বেঞ্চি জুড়ে ছাত্র-ছাত্রীর মধ্য-দুপুর গুলতানিতে জমজমাট বার আর ইট-আউট জয়েন্ট, চিলতে কিছু এপার্টমেন্ট বাড়ি আর একপাশে সরু য়ুনিভার্সিটি ক্রিক এর ধারে সবুজ ঘাসের গালচে। জোরকদমে পেরিয়ে যাই সেসব, কানে আলতো সুরে চলতে থাকে  "ঘনন-ঘনন ঘির ঘির আয়ে বাদরা .. " তার পরেই শুরু হাইড পার্ক অঞ্চল। পিচ-ঢালা রাস্তা চলে গেছে উচু-নিচু ঢেউ খেলিয়ে, যদিও বড় রাস্তা, কিন্তু দুপাশের গাছ-গাছালির মোড়কে সে যেন এক বীথিপথ। তার পাশে ছোট্ট ছোট্ট বাড়ি। রাস্তার পাশে ঘন সবুজ লন পেরিয়ে আকিবুকি মোরামের পথ চলে গেছে বারান্দার দিকে, পাশে বাগান আলো করে ফুটে আছে সূর্যমুখী-লিলি কিম্বা ফরগেট-মি-নট--কোথাও বা বাগানেই এককোনে পাথর গেথে বানানো হয়েছে ঝরনা, কোনো বাগানে পরি আর এন্জেল এর মূর্তি সাজানো। বাগান পেরিয়ে ছোট্ট বারান্দা, সাজানো চেয়ার বা দোলনা--ধোয়া-ওঠা এক কাপ চা আর একটা বই থাকলেই আমার স্বপ্নের স্বর্গ! 


একতলা-দোতলা বাড়ি গুলো বিকেলের ব্যস্ততায় সবে জেগে উঠছে। কোনো বাড়িতে গৃহকর্তা-কর্ত্রী সবে ফিরেছেন অফিস সেরে, বাড়ির কুকুর গাড়ি থেকে তারা নামতে না নামতে ছুটে গিয়ে অভ্যর্থনা করতে শুরু করেছে--কোনো বাড়িতে আবার বারান্দার এক কোনায় পুরনো দিনের টুইড কোট আর ক্যাপ পরা দাদু বসেআছেন খবরের কাগজ হাতে নিয়ে, পাশ দিয়ে যাবার সময় একগাল হেসে দু-একটি কথা বিনিময় করে নিচ্ছেন পথচারীদের সঙ্গে, যত্নে সাজানো বাগান দেখে তাদের মুগ্ধ চোখের বাহবা কুড়িয়ে নিচ্ছেন .. কোনো বাড়িতে সোরগোল, গরমের ছুটি তে বাড়িতেই আছে তিন ভাই-বোন্, বিকেল হতে-না-হতেই শুরু হয়ে গেছে তাদের প্রাত্যহিক খুনসুটি--একটা ফুটবল আর দু-চাকা ওয়াকার নিয়ে বাগান-ময় ছুটে বেড়াচ্ছে তারা। সাবলীল স্বতস্ফুর্ত প্রানের শোভাযাত্রা ছড়ানো এ পথের দুপাশে, ছবির মত সুন্দর বাড়ি তে সুন্দর জীবনের আভাস ফুটে আছে সর্বত্র। জানিনা সে জীবন পর্দার আড়ালেও এক ই রকম সুন্দর কিনা, জানিনা এই নির্মল শোভার বাকে বাকে লুকিয়ে আছে কিনা দৈনন্দিনতার মালিন্য--আমি পথচলতি এই সৌরভ টুকু নিয়েই খুশি থাকি। চড়াই-উতরাই বেয়ে চলতে থাকি পথের সঙ্গে, আর আকাশে ঘনিয়ে আসে শাওন মেঘের ছায়া। মোড়ের কাছে এসে একপাশে পরে থাকে আদিগন্ত সবুজ গলফ কোর্স, আর তার ই বুকে হঠাত নেমে আসে বৃষ্টি। ঘামে ভেজা শরীরে গলফ-কোর্স এর পাশ দিয়ে বাড়ির দিকে চলতে থাকি, আর ঝিরঝিরে বৃষ্টি একটু-একটু করে যত্নে ধুয়ে দেয় সব অবসাদ। ভুলে যেতে থাকি এ-কদিনের অলস জড় দিন গুলো, ধুয়ে যায় অনির্দেশ্য মন-খারাপের রং। সবুজ ঘাসে পা ডুবিয়ে চলতে চলতে মুঠোর মধ্যে পুরে ফেলি একটুকর আকাশ, আর মনে মনে শপথ নিই, ভালো থাকব এবার থেকে--এমনকি মেঘ না করলেও।




সোমবার, ১০ জুন, ২০১৩

কেমন যেন মৃত্যু-কঠিন হয়ে উঠেছে চারপাশ। বাইরে নির্মেঘ তীব্র নীল আকাশ আর ঝকঝকে ছুরির মত নির্মম রোদ দিনের বুকে এতটুকু ছায়ার আঁচল ও রাখতে দেয়নি, এমনি প্রকট। তার উপরে বার্তা আসে মৃতুর, বার্তা আসে অসুন্দরের। যেন অনেক বয়েস হয়ে গেছে এই পৃথিবী টার, ঘোলাটে দু-চোখে তার যেন আর ধরা পড়ে না জীবনের সবুজ। মনের মধ্যেও উষরতার বাস, অস্থির সময় শুধু উল্টে-পাল্টে যায় বালির স্তূপ, সৃষ্টি আসেনা। দিনের ক্লান্তিভার জমে ওঠে শুধু, নতুন ছন্দ খুঁজে পাই না। শুনি কোথায় যেন বৃষ্টি এসেছে, বিগত জন্মের স্মৃতির মত মনে আসে সোদা বাস, জলের শব্দ; আমার রাজ্যে পূবে হাওয়া আসেনা সজল শ্বাসে। দূরদেশ থেকে দেখি চেনা মানুষদের হাসিমুখ; চেনার নৈকট্য টুকু ধরা দেয়না। ধূসর থেকে ধূসরতর হয়ে উঠি আমি, আরো বেশি গম্ভীর আরো বেশি ক্লান্ত। এক অনির্দেশ্য চলা-এ চলতে চলতে কোথায় যেন খেই হারিয়ে ফেলি। তার উপর বার্তা আসে মৃত্যুর, বার্তা আসে অসুন্দরের। যেন মৃত্যু-কঠিন হয়ে উঠেছে চারপাশ, জীবনের এখানে প্রবেশ নিষেধ।

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...