রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১২

"আমার রাত পোহালো শারদ-প্রাতে"

আজ মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের শুভ-সূচনা। আর কয়েক ঘন্টা পরেই আমার চেনা শহর জেগে উঠবে আধ-ভোরের শুভ সুন্দর মুহুর্তে, বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত চন্ডিপাঠ আর সুপ্রীতি ঘোষের মধু-কন্ঠে "বাজলো তোমার আলোর বেনু"র সুরে সুরে দুলে উঠবে এক পবিত্র ভোর। এক মুহুর্তে মিথ্যে হয়ে যাবে প্রতি দিনের ক্লেদ-ক্লান্ত জীবন, মূল্য-বৃদ্ধির সঘন ঘনঘটা, এফ-ডি-আই এর সুফল-কুফল সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কচকচি--এক মুহুর্তে আমার শহর সব এক ঘেয়েমি ঝেড়ে ফেলে হয়ে উঠবে সব-পেয়েছির-দেশ। আজ যে মহালয়া, দেবীপক্ষের শুভ-সূচনা। 

বাইরের রৌদ্র-ক্লান্ত অক্টোবর কে পাশে রেখে ক্রমশ হারিয়ে যাই সেই অলীক মহালয়ার ভোরে। চারিদিকের বাস্তব কেমন মিলিয়ে যায় আমার অস্তিত্ব থেকে, স্মৃতির সমুদ্র সেচে খুঁজে পাওয়া মহালয়া র চলে উদযাপন। সদ্য-ঘুম ভাঙ্গা চোখে বারান্দায় দাড়িয়ে সেই পূব-আকাশে একটু একটু করে রঙের ছোয়া লাগার মুহূর্ত টা, চারপাশ থেকে প্রতিদ্বনিত "অহং রুদ্রেভি বসুভিশচরাম্যাহাং", তারপর সাদা ধুতি পরে বাবার সেই তর্পনে যাওয়া আর আমাদের টি ভি খুলে অত্যন্ত হাস্যকর যাত্রা-পালা ধাচের "মহিষাসুরমর্দিনী" দেখে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়া -- ফিরে আসে, ঘিরে থাকে। তাই চারিদিকে শরতের বিন্দু মাত্র চিন্হ খুঁজে না পেয়েও মনের আকাশে চলে পেজা তুলো মেঘের আনাগোনা, শিউলি তলা ভরে ওঠে সাদা-কমলার টাটকা আল্পনায়। অনলাইন পূজাবার্ষিকী তে কাকাবাবুর জঘন্য গল্প পরেও সেদিনের সেই হাতে আনন্দমেলা পেয়েই অপ্রকাশিত সত্যজিত আর শৈলেন ঘোষের উপন্যাস গোগ্রাসে পরে ফেলার উত্তেজনা সমান সত্যি থেকে যায়। মনে মনে ফিরে যাই সেই পরীক্ষা-শেষের বিকেলে মায়ের হাত ধরে কুমোরটুলি আর বাগবাজার ঘাটে--সেই তার পরের দু তিন দিনের লাগাতার আয়োজনের শেষে পঞ্চমীতে স্কুলে "আগমনী" অনুষ্ঠানে--সেই চতুর্থীর রাতে ঢাকের বোলে পাড়ার ঠাকুর আসার উত্সাহে, সেই বাড়ির সামনে এক গুচ্ছ টুনির আলোয় এক বছরের অপেক্ষার শেষে হঠাত এসে পড়া দুর্গাপুজোর আনন্দে। জানি না কবে আবার কলকাতার দূর্গা পুজো মেখে নিতে পারব সারা গায়ে, কবে আবার ফিরবে সেই বোনের সঙ্গে উত্তর-মধ্য কলকাতা চষে বেড়ানো আর পেটপুরে ফুচকা-ঘুগনি-আইসক্রীম এর দুপুর--হয়ত ফেরার দিন যখন আসবে অনেক অনেক পাল্টে যাবে জীবনের রং, অনেক বদলে যাবে সম্পর্কের বহুমাত্রিকতা--শুধু জানি সেদিন ও বাগবাজার মন্ডপে দেখা পাব চিরন্তনী সেই মাতৃ-মূর্তির, সেদিন ও মহালয়ার ভোরে ঘুম ভাঙ্গাবে "রূপং দেহি জয়ং দেহি যশ দেহি"র চিরন্তন প্রার্থনা। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...