সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

একটি আষাঢ় এর দিনলিপি

কলকাতায় এখন বর্ষা । আমার অস্টিনের ঘরের বিছানায় শুয়ে শুয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে আমি কলকাতার মেঘ দেখতে পাই, বাইরের খটখটে রোদের পাশে কান পাতলে  শুনতে পাই  অঝর ধারায় ঝরে চলা শ্রাবণ কে। বাইরে নিরানন্দ দারুন গ্রীষ্ম, কিন্তু মনে আমার বর্ষার ঢল নেমেছে।
আজকের এই আগতপ্রায় সন্ধের অবসরে যদিও আমার মন জুড়ে দিল্লির বর্ষা। সে শহরে বর্ষা এক বিরল উচ্ছাস, একবার ই মাত্র দেখা পেয়েছিলাম তার, আর সেই একটি বর্ষাই আমার জীবন বদলে দিয়েছে।
তখন কলকাতা থেকে সদ্য এসে পরেছি রাজধানীর বুকে--নতুনত্বের উত্তেজনা, ইতিহাস-ঋদ্ধ প্রাচীন শহরের সান্নিধ্য সব মিলে ঝড় তুলেছে ইন্দ্রিয়-জগতে -- এমন  সময়  বন্ধুর মত আকাশে এসে হাজির হলো কলকাতার সেই চেনা বর্ষা ই।   সেই কালো ঘনঘটা, সেই সারাদিন ঝিরঝির ঝমঝম। আমার ঘরের পিছনের badminton কোর্ট থেকে সন্ধে হলেই ভেসে আসতো সোদা মাটির বাস আর ঝি-ঝি পোকা দের ঝিল্লি। হঠাত করে আকাশে খেলে যাওয়া সেই "নব জলধরে বিজুরী-রেখা", একা-ঘরে প্রথম বার সেই বাজের ভয়-দেখানো গর্জন শোনা, আর সবকিছুর মধ্যে মাখানো যেন এক নতুন দেশে আমায় নিয়ে যাবার স্বপ্ন--হেথা নয় হেথা নয় অন্য কোথা অন্য কোনখানে। সে বর্ষা যেন এক না-জানা মন কেমনের, না চেনা অতিথির জন্যে আকুল, সে বর্ষা যেন না-চেনা রঙের গভীরে ডুবে যাবার ইশারা, সে বর্ষা যেন গভীরতার নীলে  অবগাহনের আবাহন ...

আমার মনের কোন এক কোণে  এখনো জমে আছে সেই প্রতিটি সন্ধে, সেই ভিজে সিড়িতে চায়ের আড্ডা, সেই বর্ষণ-সিক্ত রাতে দোলনা, সেই আপন-মনে উঠোনে বন্ধুদের সঙ্গে ভেজা ..আর মন-কেমন, এক সমুদ্র মন-কেমন ...প্রতিটি বিন্দু তে যেন ধরা আছে সেদিনের সেই নিজেকে নতুন কে চেনা, একটু একটু করে পাল্টে যাবার, একটু একটু করে ইচ্ছেগুলোর নতুন রং ধরার ইতিহাস।

সেই বর্ষা এসেছিল যেমন আচমকা, চলেও গেছে হঠাত ই। শুধু বদলে দিয়ে গেছে আমায়। বদলে দিয়ে গেছে মেঘের দিকে তাকিয়ে ভেবে চলা আমার অলস ভাবনা গুলো, বদলে দিয়ে গেছে আমার মন-কেমনের রং। পরের বছর বর্ষা আর আসেনি দিল্লি তে, দিল্লির বর্ষা আমার আর দেখা হয়নি। কিন্তু সেই এক বর্ষাকাল ই দিয়ে গেছে জীবন-জোড়া স্মৃতি, যা এই বর্ষা-হীন অস্টিনের বুকেও ফুরোয় না ....

২টি মন্তব্য:

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...