মঙ্গলবার, ২৬ জুন, ২০১২

রূপকথারা...

ছোট্টবেলায় পড়েছিলাম রূপকথা : কোন দেশে কোন দুষ্টু জাদুকর বানিয়েছিল এক জাদু-আয়না, যার ভিতর দিয়ে দেখলে সব সুন্দর অসুন্দর হয়ে দেখা দেবে; যা কিছু শুভ তার ভিতর থেকে উঁকি দেবে অমঙ্গলের ছায়া; পৃথিবীর রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ ভরা শোভা হয়ে উঠবে যেন এক নিষ্ঠুর ব্যঙ্গ-চিত্র...সেই আয়না কিকরে যেন গেল ভেঙ্গে, তার টুকরোগুলো ছড়িয়ে পড়ল হাওয়ায় হাওয়ায়, তার ই দুটি খন্ড এসে পড়ল মস্ত শহরের বাসিন্দা এক ছোট্ট ছেলে Kay এর চোখে আর হৃদয়ে, তাকে ভুলিয়ে দিল ঠাকুমার মুখে শোনা রুপকথাগুলো, ভুলিয়ে দিল তার খেলার সাথী Gerda কে, আর কি এক মোহময় আকর্ষণে তুষার-রানী টেনে নিল তার তুষার-শীতল হয়ে যাওয়া ছোট্ট মন টিকে...
তারপর সে কেমন করে পৌছালো তুষার-রানীর প্রাসাদে, কেমন করে Gerda অপরাজেয় ভালবাসায় খুঁজে পেল তাকে আর চোখের জলে গলিয়ে দিল তার বুকে বিধে থাকা আরশির টুকরো--সে অন্য গল্প | ভারী ভয় করত ছোটবেলায় এই গল্প তা পড়তে পড়তে-- চেনা পৃথিবী কে অচেনা চোখে দেখার ভয়; চেনা মানুষ কে চকিতে বিস্মরণের ভয়...
আজ ও ভয় পাচ্ছি--বড় হতে হতে কখন হয়ত বেখেয়ালে আমার চোখে বিধে গেছে সেই ভাঙ্গা আরশির অবশেষ--নইলে কেন এই সবুজ সুন্দর পৃথিবী টাকে এত ধুসর দেখছি প্রতিদিন; কেন সকালের সোনার সূর্য ঠিক তেমন করে আলোয় আলো করে তুলছে না আমার দিনগুলো; কেন চেনা-না-চেনার দ্বন্দ নিয়ে তাকাই আজ  মানুষের দিকে--খুঁজে পাই না বিশ্বাসের ভিত? সেই সকাল গুলো, যখন অবন ঠাকুরের "কুকড়" সকাল কে আবাহন করে অন্ত "আলোর ফুলকি" গান দিয়ে--সেই মন-খারাপ-করা মেঘলা বিকেল গুলো যখন আকাশের দিকে চাইলেই চোখে পরত মেঘবরণ কন্যে তার কুচবরণ কেশ--সেই পৃথিবী কে প্রথম দেখার রঙিন বিস্ময়--আজ কেন এত অলীক এত বেমানান বোধ হয়? কেন এত বড় হয়ে গেলাম যে কিছুতেই বিশ্বাস হয় না বুকে কাটা বিধিয়ে সারারাত গানে গানে রক্ত-গোলাপ ফুটিয়ে চলা nightingale এর গল্পটা, বোকা মনে হয় অচেনা ভালবাসার টানে নিজের জগত ছেড়ে চলে আসা mermaid কে, গাজাখুরি মনে হয় তিনবার হাতে তালি দিয়েই অঘটন-ঘটন-পটিয়সী জাদুকরী ভাসিলিসা র কাহিনী--কেন, কেন? কখন যেন এই দুনিয়া আমার চোখে আমার বুকে বিধিয়ে দিয়েছে সেই জাদু-আয়নার টুকরো; তাই সাদা আর চোখেই পরে না, তির্যক এক পৃথিবী কে অবিশ্বাস আর ভয়ে দেখে যাই আমি, আর অপেক্ষা করি যদি কোনো দিন ও কোনো উষ্ণ অশ্রুর বাধ ভাঙ্গে আমার মনে, নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গের মত জেগে ওঠে ঘুমিয়ে থাকা উষ্ণতা, নব-আমন্ত্রণে জড়িয়ে ধরি হারিয়ে পাওয়া আমার সুন্দর জগত টাকে...তুষার-রানীর এই প্রাসাদে সে দিনের আর যে কত দেরী...

৪টি মন্তব্য:

  1. তোমার চোখে কোনদিন যেন সে শয়তানি আয়নার টুকরো না বেঁধে স্বাগতা, আমার আন্তরিক কামনা রইল।

    উত্তরমুছুন
  2. tui blog likhis, bolis ni to??? Aaj hothat Manoneeta amay thikana dilo..... asadharon laglo kichhu lekha..... amar blog-e amontron janalam.... http://saikatbhattacharya.blogspot.in

    উত্তরমুছুন
  3. amar naam swagata bhattacharYA na, swagata bhattacharJEE :) tor ta follow korchi i to kin2 notun lekha de..

    উত্তরমুছুন

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...