আমাদের বাড়ি ছিল রাজাবাজারের বেশ কাছে, জ্ঞান হওয়া থেকেই আজানের ডাকে ঘুম ভাঙার অভ্যেস ছিল। এখনো বেশ মনে পড়ে সেই ভোরের হাওয়ায় ভেসে আসা ডাক, আর তারপরে হালকা হয়ে যাওয়া ঘুমে মা কে জড়িয়ে ধরে মা-মা গন্ধে ডুবে যেতে যেতে আবার ঘুমিয়ে পড়ার অদ্ভুত তৃপ্তি। বড়ো হয়ে স্কুল এ পড়ার সময় হলো রাত জাগার অভ্যেস। কাজে-অকাজে রাত কাবার করে ভোর পাঁচটায় শুতে যেতাম, আর ভোরাই হাওয়ায় ভেসে আসত আজানের সুর, একটু একটু করে আলো ফুটিয়ে দিত আকাশে, সেই আলোর ফুলকি-র কুঁকড়ো র মত-- আর রাতজাগা ক্লান্তিতে গা এলিয়ে দিতাম ঘণ্টাকয়ের ছোট্ট ঘুমে। আজান মানে ছিল কি এক অচেনা রেশ, আজান মানে ছিল পবিত্র ভোরের শুরু। দিনের অন্য সময়ের নামাজ তো যেমন-তেমন, ভোরের আজান যেন কি এক অপার্থিবের কথা বলত।
আমি শব্দ-দূষণের পক্ষে নই, আমি মাইকে রবীন্দ্রসংগীতের পক্ষে নই, আমি বাবা তারকনাথের যাত্রার জলসত্রে মাইকে টুনির-মা-র পক্ষে নই, আমি অনর্থক হর্ন আর ভোটের আগে দিনভর জনসভার পক্ষে নই। কিন্তু আমি ভোরের আজানের, মাঝরাতের সন্ধিপুজোর, ক্রিস্টমাস ইভে ক্যারোল এর পক্ষে। কেননা আমার দেশ আমায় ছোটবেলা থেকে শিখিয়েছে এই সব কিছুকে নিয়ে বাঁচতে, সম্মান করতে। অথবা, আমার কাছে এই ছোট ছোট সুবিধে-অসুবিধে, ভালোলাগা-না লাগা নিয়ে বাঁচার এই চালচিত্র টাই আমার দেশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন