রবিবার, ১৭ মে, ২০১৫

এ গান শোনাব বিকেলবেলায়

অনেক দিন পর একটা ছবি দেখে ভাবতে ইচ্ছে করলো, লিখতে ইচ্ছে করলো। না, সিনেমা-বিশেষজ্ঞের ভাবনা নয়, তুখোড় সমালোচকের লেখা নয়, এ যেন নেহাত ই আমার গল্প, আমার মন-খারাপের রোজনামচা। ওপেন টি বায়স্কোপ। নব্বই দশকের উত্তর কলকাতার এক গলি। একটা মায়াবী কৈশোর, একটা আটপৌরে পাড়া, একটা অনাবিল বন্ধুতা, আর কিছুটা হারানো সময়। ভাবায়, কাদায়।
অথচ আমার গল্প টা ফোয়ারা র মত নয় আদৌ। মধ্য কলকাতার মেয়ে আমি, উত্তরে শুধু স্কুল-জীবন, যা আমায় গড়েছে--সেই সুতো ধরে উত্তর কলকাতা আমার শিরা-ধমনীতে। আমার গল্প তো নেহাত ই পুরনো ইস্কুলের ভালো, পড়ুয়া শান্ত মেয়ের গল্প; নিয়ম ভাঙ্গার বেপরওয়া কোন রং নেই। তবু ওই অশ্বথ্ব চারা-ওঠা বাড়ির সারি, গা-ছমছমে সরু গলি, ভাঙ্গা পাচিলের পাশে শেওলা-ধরা গঙ্গার ঘাট যেন আমার ই গল্প বুনে চলে। ভুলে যাওয়া গান, ভুলে যাওয়া স্মৃতি, ভুলে যাওয়া চিঠি পথ আটকে এসে দাড়ায়। চোখের কোণে উষ্ণ লবণতা আর মনের ভাজে চিনচিনে ব্যথা নিয়ে তাকিয়ে থাকি পাচ নম্বর নিবেদিতা লেন এর মন্দিরের মত সেই বাড়ি থেকে বেরোনো দুদিকে লম্বা বেনি-ঝোলানো, চশমা পরা, ভীষণ সিরিয়াস সেই মেয়েটির দিকে-- যে পণ করেছে চশমার আড়ালে লুকিয়ে রাখবে তার অস্তিত্ব টুকু, আর সেই আপাত-গাম্ভীর্যের আড়ালে যার মন তা ভারী দুর্বল, ছোট দোলায় বড় বেশি চলকে ওঠে, ছোট দুঃখে বড় বেশি রক্ত ঝরায়। আর বায়স্কোপ এর মতই চোখে ভাসছে অগোছালো কিছু মুহূর্ত: হালকা হাসির কিম্বা গভীর ভাবনার, এলোমেলো হাটার কিম্বা চুপচাপ মৌন-মুখরতার, সাহচর্যের কিম্বা সঙ্গহীনতার। যারা ওই উড়িয়ে দেওয়া বুদবুদের মতই মুহূর্তেকের জন্যে এসেছিল আবার মিলিয়ে গেছে কোনো চিন্হ না রেখেই। হয়ত আমি ই ধরে রাখতে চাইনি। চাই ও না তাদের ফিরে পেতে, শুধু এমন কিছু মুহূর্তে, এমন কিছু রাতে তারা ফিরে আসে, জানিয়ে যায় তারা ছিল, তারা আজ ও আছে আমার মনের কোনো এক কোন জুড়ে। জানি না এ কেমন অনুভূতি, একদিকে এক অদ্ভূত পূর্ণতার স্বাদ, আবার কি এক না-পাওয়া, কি এক হারানোর লবনাক্ত ঘ্রাণ-- হঠাত যেন বুঝতে পারি, এখনো আমি ভাবতে পারি, অনুভব করতে পারি, এখনো আমি বেচে আছি, বড্ড বেশি করে বেচে আছি।

ভালো থেকো তোমরা, যাদের আজ আর হাত বাড়ালেই ছোওয়া যাবেনা,তবু যারা আছ আমার স্মৃতি জুড়ে। ভালো থেকো আমার ইস্কুল, যার কাছে গচ্ছিত আছে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু সময়। আর, ভালো থেকো উত্তর কলকাতা, তোমার ভেঙ্গে পড়া সৌধের সম্ভার নিয়ে, তোমার হারিয়ে যাওয়া সত্তা নিয়ে, তোমার অনাবাসী নাগরিক দের নিয়ে-- হারিয়ে যেও না, নইলে আমি কার কাছে ফিরে গিয়ে ফেরত চাইব আমার সেই ফেলে আসা দিনগুলোকে?









৪টি মন্তব্য:

  1. খুব সুন্দর লেখা - আমি প্রথমে 'বন্ধু চল' গানটা শুনে তবে সিনেমাটা দেখি - যদিও আমি দক্ষিণ কলকাতা ছেলে, কিন্তু সেন্টিমেন্টাল-কলকাতাকে দেখতে বেশ ভালই লাগে...

    উত্তরমুছুন
  2. উত্তর কলকাতা শুধু পূজোর সময়ে দেখেছি | মধ্য কলকাতা বলতে বুঝি কলেজ স্ট্রিট আর শিয়ালদা , আর দক্ষিন কলকাতা বলতে যাদবপুর :) এক ঝটকায় যেগুলো মাথায় আসে

    উত্তরমুছুন

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...