বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১১

শীত এর শহর...

ঋতুর হিসেবে এখন হেমন্ত, কিন্তু এই পরবাস এ শীত এর আসার সময় হয়ে গেছে প্রায়...সকালের মিঠে রোদ আর ঠান্ডা হাওয়ার গায়ে শীতের আসার বার্তা লেখা ...দুপুরের দিকে মিলিয়ে যায় সেই সামান্য শীতের আমেজ টুকু, কিন্তু সকালের ওই ঠান্ডা হাওয়া মেখে ক্লাস এ যাওয়ার অনুভূতিটা, গরম ধওয়া ওঠা উষ্ণ চায়ের জন্যে তেষ্টা টা, আর রাস্তার পাশে গাছের লাল কমলার "ফল কলর্স " এ সেজে ওঠা রূপ টা মনে করিয়ে দেয়: শীত এসে গেল..আর অমনি মনে পরে যায় আমার শহরের শীতকাল কে...
কলকাতার শীত বলতে মনে পরে আমার স্কুল এর দিনগুলো, টুইশন থাকত সকাল সকাল, আর একে আমি ঘুমকাতুরে মানুষ তার ওপর শীতের সকালে  পড়তে যাওয়া-- অসহনীয় অত্যাচার মনে হত..ফাকা বাস ঢিকিয়ে ঢিকিয়ে চলেছে আর জানলার পাশে বসে আমি ঘুমঘুম চোখে দেখছি কুয়াশার আড়ালে আমার শহরের জেগে ওঠা, আর মাঝে মাঝেই বাবা এবং আশপাশের কাকু-প্রতিম মানুষজন ধমকে বলছেন জানলাটা বন্ধ করে দিতে--এই স্মৃতি টা কলকাতার শীতের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে গেছে আমার মনে :) আমাদের বাড়ির পাশে একটা দেহাতি বস্তি আছে তারা সকালে গুলের আগুনে উনুন জালত, সেই ধোয়ার ওম এ যেন পারাটার শীত ভাব কাটতো ; হাই তুলে উঠে কাজে লাগত যে যার মত...
শীতের সকালের থেকে আমার অনেক বেশি প্রিয় শীতের দুপুর...ঠান্ডা জলে হী-হী করতে করতে স্নান করেই চলে যেতাম বিরাট ছাদে: মাদুর পেতে বসে চুল শুকনো; সঙ্গে অবশ্যই থাকত পরার বইপত্র কিন্তু পাহারা দেবার লোক তো ছিলনা কাজেই... 
ছাদ এ ঘুরে ঘুরে দেখতাম আশপাশের বাড়িগুলো কে, মিঠে রোদ গায়ে মেখে নিতে নিতে তাদের গৃহস্থালীর খুটিনাটি দেখতে ভারী ভালো লাগত..বাপারটা খুব ই নাক গলানো শোনাচ্ছে ঠিক ই,কিন্তু ওই যে কোনো বাড়ির ছাদ এ কেউ লেপ রোদে দিছে, কোনো ঠাকুমা আচারের শিশি জারাতে দিল, বাড়িগুলো র রান্নাঘর থেকে সেই অবিস্মরণীয় বাঙালি-রান্নার আওয়াজ আর মাছভাজা ফুলকপি কড়াই শুটি রান্নার মিশ্র গন্ধটা--এগুলো আমার শীতের দুপুর টাকে যেন ভরে রাখত  ...আর  ছিল মাথার  ওপরের নিল আকাশ...শীতকালের মত পরিষ্কার নিল আকাশ কলকাতা অন্য কোনো সময় দেখতে পায় না বলেই আমার ধারণা...তার বুকে সেই চিল এর ছোট থেকে আরো ছোট হয়ে যাওয়া আর গোল হয়ে উড়তে উড়তে আসতে আসতে পুরো অঞ্চল তার এদিক থেকে ওদিক ঘুরে আসার জ্যামিতি টাও ভারী আকর্ষনীয় লাগত... 
কলকাতায় শীত ভারী সল্প স্থায়ী...কিন্তু তার জন্যই বোধয় শীতের গল্প জমে রয়েছে বুক ভরে--শীত মানে রঙিন সব  sweater আর শাল এর বাহার , শীত মানে হাজারো special খাওয়া দাওয়া , শীত মানে ধুলো -ওঠা ময়দান  এ বইমেলা , circus আরো কত কি ...সেসব  গল্প ভাবতে  বসব  অন্য একদিন --এখন romantic অতীত -ভাবনা   ছেড়ে  ফিরে  আসা  যাক  অস্টিন  এর শীত আসার এই সন্ধ্যেতে , যখন  আমার সামনে  এখনো  অনেকগুলো  কাজ  জমে আছে  ....





২টি মন্তব্য:

  1. স্বাগতা, একটুও নাক গলানো শোনাচ্ছেনা। ছাদে বসে কমলালেবু খেতে খেতে পাড়া পর্যবেক্ষণ, আহা এর থেকে ভালো জিনিস আর হয় নাকি? আর এর থেকে ভালো শীতের বর্ণনাও আর হয়না। খুব খুব ভাল লাগলো পড়ে। সকালবেলা বাসে চেপে পড়তে যাওয়ার দৃশ্যটাও একেবারে নিখুঁত এঁকেছ। আর এরকম লেখার অপেক্ষায় থাকব।

    উত্তরমুছুন

স্পিতি-যাপন : পর্ব ৪

আমাদের স্পিতি সফরের দশ দিন বেঁধে রাখতে চাই শব্দের নিগড়ে। সেই প্রয়াসের আজ চতুর্থ পর্ব। দিন ৪: ছিতকুল-...